বন্ধু থেকো আজীবন

সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার

বন্ধু নিয়ে অনেক উক্তি বা বাণী প্রচলিত। পাঠ্যবইয়ের পাতায়ও চোখে পড়ে ‘অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু’। আবার বিশ্বখ্যাত দার্শনিক এরিস্টটল বলে গেছেন, ‘দুর্ভাগ্যবান তারাই, যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই।’ তিনিই বলেছেন, ‘বন্ধু হলো একই আত্মার দুইটি শরীর।’ বাস্তবে বন্ধু কী, তা যাদের ভালো বন্ধু আছে তারাই বলতে পারবেন। তবে বন্ধুত্বের সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে আর সবার মাঝে বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছরই বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস উদযাপন করা হয়। আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার ছিল বিশ্ব বন্ধু দিবস। অনেকেই বলেন, বন্ধুত্ব উদযাপনের জন্য তো আলাদা কোনো দিবস প্রয়োজন নেই, কিন্তু তবু এই দিনটিকে ঘিরে বাড়তি কিছু ভাবনা থাকে সবার। একে অন্যকে ‘হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে’ বা ‘বন্ধুত্বের শুভেচ্ছা’ জানান এইদিনে। আগের মতো উইশ কার্ড বা গিফট আদানপ্রদানের চল এখন উঠে গেছে, তাই এখন শুভেচ্ছা জানানোর ধরনও ফেসবুকে সীমাবদ্ধ। ইনবক্সে একটা মেসেজ বা একটা স্টিকার পাঠিয়ে দিলেই হলো, ব্যস!

ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে জানা গেল, বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অংশীদার জয়েস হল বন্ধু দিবসের ভাবনা চালু করতে চেয়েছিলেন। বছরের একটি দিনে বন্ধু দিবস পালন করে কার্ড বিলি করার প্রচলন শুরু করেন তিনি। তবে অনেকেই তখন বুঝতে পারেন, এটা তার কার্ডের ব্যবসা বাড়ানোর ফন্দি। আবার ইতিহাস বলছে, আমেরিকাতে ১৯৩৫ সাল থেকে বন্ধু দিবস উদযাপনের প্রথা চলছে। জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদান আর তাদের প্রতি সম্মান জানানোর লক্ষ্যেই আমেরিকান কংগ্রেস সে বছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবারকে বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাইকে অফিসিয়াল ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে ঘোষণা করা হয়। তবে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবারেই সারা বিশ্বে বন্ধু দিবস পালন করা হয়।

এ তো গেল ইতিহাসের কথা। বন্ধু দিবস নিয়ে আমাদের বন্ধুরা কী ভাবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ রুহুল আমীন বলেন, ‘বন্ধুরা অক্সিজেনের মতো। বন্ধু ছাড়া বেঁচে থাকাই অসম্ভব। এই বন্ধুত্বকে উদযাপনের জন্য একটা দিবস থাকতে পারে বৈকি, এদিন সবাই মিলে আড্ডা-ফুর্তির মাধ্যমে বন্ধুত্বে নতুনমাত্রা আনা যেতে পারে।’

বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম নিধির মতে, ‘বন্ধুত্ব তো সারাবছরের। সারাজীবনের। এজন্য আলাদা দিবসকে ঘটা করে পালনের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।’

তবে বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে মনোমালিন্য হয়। ঝগড়াও বাঁধে। এমন হলে কী করণীয়, সে প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক রুদমিলা মাহবুব বলেন, ‘একসঙ্গে চলাফেরায় মনোমালিন্য হতেই পারে। এগুলো সম্পর্কেরই অংশ। এক বন্ধু রাগ করলে তার অভিমান ভাঙানোর দায়িত্ব অন্য বন্ধুকেই নিতে হবে। তবে কোনো বন্ধু যদি খারাপ দিকে পা বাড়াতে যায়, আর সেক্ষেত্রে যদি অন্যদের সাথে মনোমালিন্য হয়, তবে যতকিছুই হোক না কেন ওই বন্ধুকে ভাল দিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বাংলাদেশে শুধু বন্ধু দিবসকে কেন্দ্র করে নয়, সারাবছর ধরেই বন্ধুরা মিলে অনেকরকমের সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানারকম সৃজনশীল কাজে জড়িত আছেন। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনও গড়ে তুলেছেন অনেকে। এসব উদ্যোগের শুরুটা হয় বন্ধুরা মিলেই।

সবশেষে, এক বন্ধুর প্রতি আরেক বন্ধুর বার্তা হলো, বন্ধু থেকো আজীবন।